" সবুজের ঐ প্রান্তরে উদ্দ্যস্ত রাঙা রবি,
যেন আঁকিয়াছে এই বাংলার ছবি,
যেন ভুলাইয়া দিয়াছে বিভেদ পত্তন সবি,
যেন বলিতেছে তাই,আমি যে চির সবুজের প্রান্ত সীমায় "
সুন্দরবন আমাদের দেশের এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এটি শুধু বাংলাদেশের গর্বই নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনও। সমুদ্রতীর ধরে এ যেন এক বিশাল সবুজ প্রাচীর, যেখানে প্রকৃতির রূপ আর বৈচিত্র্য একসাথে মিশে গেছে। এখানকার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার অদ্ভুত পরিবেশে—হাজারো নদী, খাল আর ঘোলাটে স্রোত এই বনের প্রাণ। চারদিকে যতদূর চোখ যায়, উঁচু গাছগুলো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের পাতা মিলিয়ে যেন এক বিশাল সবুজ ছাতা। আর মাটির কাছে দেখা যায় জোয়ার-ভাটার খেলা
আর নানা ধরনের ম্যানগ্রোভ গাছের সমাহার, যা কৌতূহলী ভ্রমণকারীর মনে দারুণ বিস্ময় জাগায়। সুন্দরবন আসলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র আর মেঘনার মিলিত প্রবাহে তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপের অংশ। পুরো এলাকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে নদী আর খাল ছড়িয়ে আছে, যেগুলোর প্রস্থ কখনও কয়েক মিটার, আবার কখনও কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। বাংলাদেশের দিকে বনটা অনেক বেশি ঘন, যেখানে ম্যানগ্রোভ গাছের আধিপত্য স্পষ্ট। আবহাওয়াও একেবারে ট্রপিক্যাল—বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি, আর শীতকালে হালকা ও শুষ্ক আবহাওয়া।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম আসলেই ভীষণ অনন্য আর জটিল। এখানে প্রতিটি প্রাণী আর গাছপালা একে অপরের সঙ্গে এক অদৃশ্য বন্ধনে জড়িয়ে আছে। এ বন যেন নিজেই এক জীবন্ত দুনিয়া। স্তন্যপায়ী প্রাণীর দিক থেকে দেখলে, প্রায় ৪২ প্রজাতির মধ্যে ২৫টা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি এখানে টিকে আছে। আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তো রয়েল বেঙ্গল টাইগার—যার সংখ্যা এখন প্রায় ১৮০-এর মতো।
সত্যিই, তাকে সুন্দরবনের রাজা বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হয় না।এখানকার নদী আর খালের ধারে ধারে নানা রঙের পাখির সমাহার চোখে পড়ে। ৩১৫ প্রজাতির পাখি রেকর্ড হয়েছে এখানে, যার মধ্যে ৯৫টা জলপাখি আর ৩৮টা শিকারি পাখি। ভ্রমণকারীরা সহজেই দেখতে পায় নয় প্রজাতির কিংফিশার, বিশেষ করে বাদামী-পাখাওয়ালা আর বড় ঠোঁটওয়ালা স্টর্ক-বিল্ড কিংফিশার। এমনকি ভাগ্য ভালো থাকলে
ধূসর-মাথাওয়ালা মাছের ঈগলও দেখা যায়—যেটা বেশ বিরল। শুধু প্রাণী নয়, উদ্ভিদও এই বনকে করেছে সমৃদ্ধ। সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ ধরনের নানা গাছ আছে—বড় গাছ, ঝোপঝাড়, ঘাস, লতানো উদ্ভিদ, এমনকি গাছে জন্মানো এপিফাইটও। বেশিরভাগই চিরসবুজ, আর তাদের শরীরে রয়েছে বিশেষ অভিযোজন, যাতে তারা জোয়ার-ভাটার এই কঠিন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এর মধ্যে সুন্দরী আর গেওয়া গাছ সবচেয়ে পরিচিত।